
Home দৃষ্টিপাত > মেহেদীর সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল
এই পৃষ্ঠাটি মোট 589 বার পড়া হয়েছে
মেহেদীর সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল
দরিদ্র পরিবারের সন্তান মেহেদী হাসান স্বপ্ন দেখতেন একদিন তার নিজের বাড়ী-গাড়ী হবে। বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে সেই বাড়ীতে বসবাস করবেন। তাদের আর কোন দুঃখ থাকবেনা। তার দু’ মেয়ে পড়ালেখা করে অনেক বড় হবে-কিন্তু না মেহেদীর সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। অবরোধকারীদের দেয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। সেই সাথে একটি দরিদ্র পরিবারের সব আশা ভরসাও শেষ হলো। শুক্রবার সকালে মেহেদী হাসান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। মেহেদী হাসান মারা যাবার পর এ পরিবারটি এখন একেবারেই নিঃস্ব হবার পথে।
একসময় গ্রামের প্রভাবশালী পরিবার ছিল মেহেদীদের। বাবা তারা শেখ ডিক্রিরচর ইউনিয়নের বিত্তবানদের মধ্যে একজন ছিলেন। জায়গা জমি, বাড়ী-ঘর, সুনাম সব ছিল তারা শেখের। কিন্তু সেটি আজ থেকে ১০ বছর আগের কথা। পদ্মার কড়াল গ্রাসে দফায় দফায় নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে জায়গা-জমি, ঘর-বাড়ী সবকিছু হারাতে হয়। পরে তারা শেখ স্ত্রী ছেলে-মেয়ে নিয়ে আশ্রয় নেন ফরিদপুর শহরের বায়তুল আমানের রেলের সরকারী জায়গায়। এখানে আসার পর থেকে সংগ্রাম শুরু হয় মেহেদীর। বৃদ্ধ বাবা কাজ না করলেও মেহেদী ও তার দু ভাই মন্টু ও চুন্নুর আয় দিয়েই কোন রকমে চলতো সংসার। পরে ভাইয়েরা আলাদা হয়ে গেলে সংসারের দায়িত্ব কাধে পড়ে মেহেদীর উপর। সে বাবা-মাকে নিয়ে রেলের জায়গায় থাকতো। বিভিন্ন কাজ করে কোন রকমে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল মেহেদী। কয়েকদিন অটোবাইক চালানোর কাজ করে। পরে ট্রাকের ড্রাইভার হিসাবে চাকুরী নেয়। যে বেতন পেত তা দিয়ে বাবা-মা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে কষ্টের মাঝে চলছিল কোন রকমে। গত ৫ মাস আগে গ্রামীন ব্যাংক, আশা এনজিওসহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ঋন-কর্জ করে পুরাতন একটি ট্রাক কেনেন ৫ লাখ টাকা দিয়ে। ট্রাক কিনে নিজেই তা চালাতেন। সংসারের হাল ধরতে স্ত্রী কোহিনুর বেগমকে কাজে নিতেন। ট্রাক চালিয়ে বেশ ভালো ভাবেই কেটে যাচ্ছিল মেহেদীর দিনকাল। তার দু মেয়ে মিথিলা (৫) ও মিম (২) কে পড়ালেখা করে শিক্ষিত করতে চেয়েছিল মেহেদী। নদী ভাঙ্গনে সবকিছু হারা মেহেদী স্বপ্ন দেখছিল জমি কিনে বাড়ী করার। বৃদ্ধ বাবা-মাকে সে বাড়ীতে রাখার। কিন্তু মেহেদীর স্বপ্ন পূরন হলোনা। গত ৩০ নভেম্বর মেহেদী তার স্ত্রী কোহিনুর বেগমকে নিয়ে কাজে বেড়িয়েছিলেন। মেহেদী তার ট্রাকে করে সিএন্ডবি ঘাট থেকে ইট নিয়ে সদরপুরের কৃষ্টপুরে যান। সেখানে ইট নামিয়ে বাড়ী ফিরছিলেন। পথিমধ্যে শহরের হরিসভায় রাতের বেলা দুবৃর্ত্তরা ট্রাকে আগুন দেয়। আগুনে মেহেদী ও তার স্ত্রী কোহিনুর বেগম দগ্ধ হয়। মেহেদীর অবস্থা আশংকাজনক হলে তাকে পরদিন সকালে ঢাকায় পাঠানো হয়। ৬ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে সে মারা যায়। মেহেদীর প্রতিবেশীরা জানান, মেহেদী তার দু মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। কষ্ট করে একটি ট্রাকও কিনেছিলেন। মেহেদী ট্রাক চালালেও তার স্ত্রী কহিনুর বেগম দিনমজুরীর কাজ করতো। বেশীর ভাগ সময় স্বামীর সাথে কাজে যেত। মেহেদীর ভাই মন্টু শেখ জানান, তার ভাই বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধারদেনা করে পুরাতন একটি ট্রাক কিনেছিলেন। ব্রাক, গ্রামীন ব্যাংক, আশা এনজিও থেকে ঋন নিয়েছেন। সেই টাকা এখনো পরিশোধ হয়নি। কিভাবে এতটাকা পরিশোধ করা হবে তা তাদের জানা নেই। তাছাড়া মেহেদী মারা যাওয়ায় তার স্ত্রী ও ছোট দু’ মেয়ের ভবিষ্যত একপ্রকার অন্ধকারই হয়ে গেল।
রিপোর্ট: কামরুজ্জামান সোহেল
তথ্যসূত্র: ফরিদপুর কন্ঠ