
Home দৃষ্টিপাত > ভাল নেই মাদারীপুরের বানর
এই পৃষ্ঠাটি মোট 1286 বার পড়া হয়েছে
ভাল নেই মাদারীপুরের বানর

আড়িয়াল খাঁ নদবেষ্টিত মাদারীপুর অঞ্চল এক সময় বনজঙ্গলে পূর্ণ ছিল। স্থানীয়দের ধারণা সুন্দরবন একসময় বাকেরগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।এই বাকেরগঞ্জ হয়ে কিছু বানর মাদারীপুরে আসে। ধারনা করা হয় ১৯২০ সালের দিকে সহায়ক পরিবেশ থাকায় বানর বংশবৃদ্ধি করতে করতে এর সংখ্যা দাড়িয়েছিল ২০ হাজারের বেশি।সে সময় মাদারীপুরর কুলপদ্বী,পুরন শহর ও চরমুগুরিয়ার এলাকায় বানরের বিচরণ ছিল।দেশ ভাগের আগে এ অঞ্চলে অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতি ছিল। অনেকে বানরকে দেবতা মনে করে কলা,ফলমূল, মোয়া, মুড়ি, চিড়া ইত্যাদি খেতে দিত। আস্তে আস্তে এই বানরগুলো চরমুগুরিয়া বন্দরে মানুষের মাঝে থাকতে শুরু করে। ৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বন্দরে বানরেরা মানুষের একান্ত পড়শী। ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট, রাস্তা-ঘাট এমনকি হাটের মধ্যে অবাধে বিচরণ করত বানরগুলো। বানরগুলোকে চরমুগরিয়া বন্দরের কালীবাড়ি, স্বর্নকারপট্টি, জেটিসি, আদমজী, চাল আড়ত ও চৌরাস্তা এলাকায় বেশি বিচরণ করতে দেখা যায়। জেটিসি ও আদমজীর বানরগুলো পরিত্যক্ত পাট গুদামে এবং চৌরাস্তা নদী পাড়ের বানরগুলো জেমস একাডেমীসহ আরও দুটি পরিত্যক্ত পাট গুদামে থাকে। বর্তমানে মাদারীপুর শহরের চরমুগরিয়া বন্দরে দেড় হাজার বানর কোন রকমভাবে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছ।খাদ্য সংকটে যাচ্ছে এদর দুর্দিন। সামাজিক বন বিভাগ ফরিদপুরের তত্ত্বাবধানে বানরদের জন্য খাবার দেওয়ার কর্মসূচি তিন বছর চলার পর বেশকিছু দিন আগে শেষ হয়েছে। বানরদের খাবার ও পানি সরবরাহ করার জন্য প্রশাসনে দবি জানিয়ে ফল হয়নি। সরেজমিন দেখা গেছে, চরমুগরিয়া ডিগ্রী করেজের পাশে একটি খোলা জায়গায় শতাধিক বানর বসে রয়েছে। কোনটি খুটে কুটে মাঠের ঘাস ছিড়ে খাচ্ছে, কোনটি আবার খাবারের জন্য হাহাকার করছে। একধিক মা বানরকে তাদের সন্তানকে দুধ পান করাতে দেখা গেছে। খাবার না পেয়ে মায়ের সঙ্গে শিশু বানরও শীর্নকায় হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা জেটিসিন এলাকাতেও। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরগুগরিয়া বন্দরে দেড় হাজারের বেশি বানর রয়েছে। যে সব জায়গায় খাবার দেয়া হতো সেখানে নির্ধারিত সময়ে অসংখ্য বানর এসে হাজির হয়। এ ছাড়া দর্শনার্থীরা কোন খাবার নিয়ে আসামাত্রই চারদিক থেকে অসংখ্য বানর তাদের ঘিরে ধরে। দর্শনার্থীদের দেওয়া মুড়ি পাউরুটি, বিস্কুট, বাদামসহ বিভিন্ন খাবার নিয়ে কাড়াকড়ি করছে । মাদারীপুর সামাজিক বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ ও ৯৮ সালের বন্যায় এখানকার বানরকুলের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। খাদ্যাভাবে বেশ কিছু বানর মারা যায়। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য শাজাহান খান সংসদে চরমুগরিয়া বানরের খাদ্যাভাবের কথা তুলে ধরেন। বান্যায় দুর্গত এলাকায় ত্রানের পাশাপাশি এই বানরদের জন্য ৩ টন খাদ্য বরাদ্দ হয় । পরবর্তীতে মাদারীপুরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে সরকারিভাবে ২০০৬ থেকে ২০০৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত তিনবছর এখানকার বানরদের জন্য প্রতিদিন ৫০ কেজি পাকা কলা, ১০ কেজি চিনাবাদাম, ৩০ কেজি শসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ফরিদপুরের সামাজিক বন বিভাগের পক্ষ থেকে ঠিকাদারের মাধ্যমে এই বরাদ্দকৃত খাদ্য বানরের মাঝে নিয়মিত বিতরণ করা হতো। অনেক দর্শানর্থী বানর দেখতে চরমুগরিয়া এলাকায় যায়। মাদারীপুরের পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অব ন্যাচারের পরিচালক রাজন মাহমুদ বলেন, সরকারি কোন পতিত জমিতে অভয়াশ্রম তৈরি করে সেখানে বানরগুলো থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: পত্রিকা
লেখক: বেলাল রিজভী, মাদারীপুর
ছবি: মাহফুজ মাসউদ